স্বদেশ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইনসভার সেই ২৫ সদস্যের নাম জানতে ও তাদের এক হাত নিতে চাইছেন, যারা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করেন। সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টকে মার্কিন আইনসভার ২৫ রিপাবলিকান সদস্য বলেছেন, তারা মনে করেন গত মাসে অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেন বিজয়ী হয়েছেন। খবর সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরা, ফক্স নিউজ, ইউএসএ টুডে ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের।
নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ জানায়, যেসব রিপাবলিকান নেতা নির্বাচনে বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাদের নামমাত্র রিপাবলিকান বা ‘রিপাবলিকান ইন নেইম অনলি’ (রিনো) বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওই বক্তব্য প্রচারের পরপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ট্রাম্প। এ সম্পর্কিত এক টুইটে ট্রাম্প লেখেন, বাহ এতজনকে দেখে আমি সত্যি বিস্মিত। আমাদের লড়াই মাত্র শুরু হলো। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরটিকে বরাবরের মতো ‘ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিলেও তিনি ওই রিপাবলিকানদের তালিকা চেয়ে টুইট করেছেন। নিউইয়র্ক ডেইলি জানায়, ৪ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন পোস্ট মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের ২৪৯ রিপাবলিকান সদস্যের সবার কাছে জানতে চেয়েছিল, তারা বাইডেনের জয় স্বীকার করে কিনা। বিস্ময়করভাবে মাত্র ২৫ জন জানান, তারা বাইডেনকে বিজয়ী বলে স্বীকার করেন। যদিও প্রায় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যই নির্বাচনের ফল প্রত্যয়ন করেছে। পরদিন ৫ ডিসেম্বর এ তালিকায় যুক্ত হন আরেক রিপাবলিকান নেতা।
বাইডেনকে বিজয়ী বলে স্বীকার করা রিপাবলিকান নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ট্রাম্পের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সিনেটর মিট রমনি (ইউটাহ) ও বেন সাসের (নেব্রাস্কা) মতো নেতা। এছাড়া রয়েছেন আরও সাত রিপাবলিকান নেতা, যারা অবসরের দ্বারপ্রান্তে। রয়েছেন ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য পল গোসার (এ্যারিজোনা) ও মো ব্রুকস (আলাবামা)। গত ৩ নবেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বাইডেন সুস্পষ্ট জয় পেয়েছেন। মোট ভোট ও ইলেকটোরাল ভোট দুই ক্ষেত্রেই তিনি ট্রাম্পের থেকে সুস্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু তারপরও আইনসভার রিপাবলিকান সদস্যদের বড় অংশ এখনও বাইডেনকে জয়ী স্বীকার করতে রাজি নন। এর মূল কারণ, ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া। তারা ট্রাম্পের ক্ষোভকে এড়াতে মিথ্যা করে হলেও বলছেন, নির্বাচনের ফল এখনও নিশ্চিত হয়নি।
এদিকে, প্রেসিডেন্সির প্রতি ট্রাম্পের অতি প্রেমের কারণে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কপাল পুড়তে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে পেন্সের রাজনৈতিক উচ্চাশায় জল ঢেলে দিয়েছেন। হোয়াইট হাউজের প্রতি ট্রাম্পের দুর্বার আকর্ষণই কাল হয়েছে পেন্সের জন্য। আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স রিপাবলিকান দল থেকে প্রার্থিতা চাইতে পারেন বলে অনেক আগে থেকেই গুঞ্জন রয়েছে। মাইক পেন্সের রাজনৈতিক এই আশাকে গ্রাহ্যই করছেন না ট্রাম্প। এরই মধ্যে তিনি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পথ তৈরি করতে শুরু করেছেন। সে লক্ষ্যে এখন থেকেই কাজ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় পেন্সের হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন নির্বাচনের কয়েক দিন পর মাইক পেন্স তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ফোন করেন। তারা ৩০ মিনিটের মতো আলাপ করেন। পেন্সের ওই বন্ধু জানিয়েছেন, মূলত উদ্ভূত পরিস্থিতি ও রিপাবলিকান পার্টির ওপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতেই পেন্স ফোন করেছিলেন। এতে ট্রাম্পের ব্যালট সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টার সাফল্য নিয়ে আশা প্রকাশ করলেও জালিয়াতির অভিযোগে বিভিন্ন মামলা করার প্রস্তুতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
মাইক পেন্সের ঘনিষ্ঠ সাত রিপাবলিকান নেতা জানান, ট্রাম্পের প্রতি পেন্স এখনও নিবেদিত। তিনি অনেক দিন ধরেই আশা করে আছেন, এই নিবেদনের পুরস্কার হিসেবে ট্রাম্পের পর তিনিই রিপাবলিকান দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। পাখির চোখ করে রেখেছিলেন ২০২৪ সালকে। কিন্তু এখন এই আশায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোথাও যাচ্ছেন না। হোয়াইট হাউসে তিনি আরেকটি মেয়াদ চান। ২০২৪ সালে নির্বাচন করার বিষয়টি এখনই তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন। নির্বাচনের পর থেকে এই লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহও শুরু করেছেন। মুশকিল হচ্ছে, ট্রাম্প যতদিন এই দৌড়ে থাকবেন, ততদিন পেন্সের কোন আশা নেই। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কি করবেন, তার কোন সুস্পষ্ট পরিকল্পনা পেন্স এখনও জানাননি। এমনকি কোথায় থাকবেন, তাও ঠিক করেননি। ইন্ডিয়ানাপোলিসের গবর্নরের বাসভবনে ২০১৩ সালে ওঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাইক পেন্স ও তার স্ত্রী কারেন পেন্স সরকারী আবাসনেই থেকে আসছেন। এখন ভাইস প্রেসিডেন্সির মেয়াদ ফুরানোর পর স্থায়ীভাবে থাকার জন্য একটি পছন্দসই আবাস খুঁজছেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, পেন্স আবার ইন্ডিয়ানায় ফিরবেন। তবে এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে মন্তব্য চেয়েও পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পেন্সের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এখন অনেকটাই সংকটগ্রস্ত মনে হলেও সময়ে সব বদলে যাবে। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প আরেক দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যে কথা এখন বলছেন, তা সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে যাবে। যত সময় যাবে ট্রাম্পের এ নিয়ে আগ্রহে তত ভাটা পড়বে। সঙ্গে নতুন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পকে অনেকটাই দৃশ্যের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। এই ফুরসতেই নীরবে আবার সামনে চলে আসবেন মাইক পেন্স। তাড়াহুড়ো না করে নীরবে এগিয়ে যাওয়ার যে কৌশল মাইক পেন্স এখন পর্যন্ত দেখাচ্ছেন, তা ধরে রাখতে পারলে পরের নির্বাচনে বলা যায় না, তিনিই হতে পারেন রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
বৈঠকে বসছে বাইডেন ও মার্কিন ভ্যাকসিন টিম ॥ যুক্তরাষ্ট্রের করোনা ভ্যাকসিন উদ্ভাবন উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ট্রানজিশন টিমের সঙ্গে তিনি বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন। রবিবার তিনি জানান, এই সপ্তাহে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এতে চলতি মাসে প্রথম পর্বের ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা হবে। মার্কিন সরকারের অপারেশ ওয়ার্প স্পিড উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা মনসেফ স্লায়ুই জানান, তিনি এখনও বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাত করেননি।